অধ্যাপক এল রবিন্স এর সংজ্ঞা এবং সংজ্ঞার সমালোচনা

অধ্যাপক মার্শালের অর্থনীতির সংজ্ঞা 

আপনি কি অধ্যাপক এর রবিন্স এর সংজ্ঞা সম্পর্কে জানতে চান? ১৯৩১ সালে এল রবিন্স এর একটি গ্রন্থ থেকে তার সংজ্ঞাটি প্রকাশ পায় এবং এ সংজ্ঞাটি পুরো বিশ্বব্যাপী বিশেষ খ্যাতি লাভ করে। আজকে আমরা দেখব অধ্যাপক এল রবিন্স এর সংজ্ঞা এবং এল রবিন্স এর অর্থনীতির সংজ্ঞার সমালোচনা।
অধ্যাপক এল রবিন্স এর সংজ্ঞা এবং সংজ্ঞার সমালোচনা

অর্থনীতি বলতে মনের বিজ্ঞানকে বোঝানো হয়। অর্থনীতিকে বোঝানোর জন্য বিভিন্ন অর্থনীতি বিভিন্ন প্রকার সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। চলুন আমরা ঝটপট দেখে আসি অধ্যাপক এল রবিন্স এর সংজ্ঞা এবং অধ্যাপক এল রবিন্স এর অর্থনীতির সংজ্ঞার সমালোচনা।
অধ্যাপক এল রবিন্স এর সংজ্ঞা

পেজ সূচিপত্র: অধ্যাপক এল রবিন্স এর সংজ্ঞা এবং সংজ্ঞার সমালোচনা

অধ্যাপক এল রবিন্স এর সংজ্ঞা

আপনি কি অধ্যাপক এল রবিন্স এর সংজ্ঞা খুঁজছেন? অধ্যাপক এল রবিন্স কে আধুনিক অর্থনীতিবিদ বলা হয়। তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এর রবিন ১৯৩১ সালে এন্ড ইজি অন দ্যা ন্যাচার অ্যান্ড সিগনিফিসেনস অফ ইকোনমিক্স সাইন্স নামক গ্রন্থে অর্থনীতির একটি আধুনিক বাস্তব ও বিজ্ঞানসম্মত সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা প্রদান করেছেন।

তার সংজ্ঞাটি ছিল ''অর্থনীতি একটি বিজ্ঞান যা বিকল্প ব্যবহারযোগ্য সীমিত সম্পদ  এবং অভাবের মধ্যে সমন্বয় সাধনে মানুষের আচরণ আলোচনা করে। অর্থাৎ এখানে তিনি বুঝিয়েছেন অর্থনীতি এমন একটি বিজ্ঞান যেখানে বিকল্প ব্যবহার যোগ্য সীমিত সম্পদ অর্থাৎ বিভিন্ন যোগের ব্যবহার করা যায় এমন অল্প পরিমাণ সীমিত সম্পদ এবং অভাবের সাথে সমন্বয় সাধন করার জন্য মানুষ যে সমস্ত আচরণ করে থাকে তাকে অর্থনীতি বলে।

তার এই সংজ্ঞার মাধ্যমে অর্থনীতির সমস্ত স্পষ্টতা ফুটে উঠেছে এই জন্য এই সংজ্ঞাটি অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য বলে প্রত্যেকে মনে করেছে। তার এই সঙ্গার মাধ্যমে অর্থনীতির মূল বক্তব্য ফুটে উঠেছে অর্থাৎ অর্থনীতির মূল লক্ষ্য হলো মানুষের সীমিত সম্পদের মাধ্যমে অসীম চাহিদাকে পূরণ করা সেই ক্ষেত্রে তিনি বুঝিয়েছেন 

সীমিত সম্পদ এবং অভাবের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা। আমাদের জীবনের প্রতিটি জিনিসের অভাব রয়েছে তবে সেই অভাব পূরণের জন্য সম্পদের হার সীমিত। এই সীমিত সম্পদের মাধ্যমে আমরা কিভাবে অসীম অভাবকে পূরণ করব সেই বিষয় নিয়ে অর্থনীতিতে আলোচনা করা হয় এবং এই বিষয় সম্পর্কে অধ্যাপক এর রবিন্স স্পষ্ট তথ্য প্রদান করেছে। অধ্যাপক এল রবিন্স এর সংজ্ঞার ব্যাখ্যা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে নিচে  দেখুন।

অধ্যাপক এর রবিন্স এর সংজ্ঞার ব্যাখ্যা

অধ্যাপক এল রবিন্স তার সঙ্গায় ।মানুষের  অসীম অভাব এবং বিকল্প ব্যবহারযোগ্য সীমিত সম্পদের কথা উল্লেখ করেছেন। এক্ষেত্রে মানুষ তার সীমাহীন অভাবকে কিভাবে সীমিত সম্পদের সাথে সমন্বয় সাধন করবে তার কৌশল নিয়ে আলোচনায় হলো অর্থনীতির মূল বিষয়। অর্থাৎ একজন ব্যক্তির অসীম অভাবকে কিভাবে সীমিত সম্পদের মাধ্যমে আমরা পূরণ করতে পারব সেই বিষয় নিয়ে অর্থনীতিতে আলোচনা করা হয়। অর্থনীতি অর্থাৎ মনের বিজ্ঞান এটি তৈরি হয়েছে মানব কল্যাণের উদ্দেশ্যে।

প্রিয় পাঠক আশা করছি আপনি বুঝতে পেরেছেন অধ্যাপক এল রবিন্স এর সংজ্ঞা সম্পর্কে এবং অধ্যাপক এল রবিন্স এর সংজ্ঞার ব্যাখ্যা সম্পর্কে। অধ্যাপক এর রবিন এর অর্থনীতির সংখ্যার মূল উদ্দেশ্য হলো মানবকল্যাণ সাধন এবং সীমিত সম্পদ দিয়ে অসীম অভাবকে পূরণ করা। এবার চলুন আমরা দেখে আসি অধ্যাপক এল রবিন্স এর সংজ্ঞার বৈশিষ্ট্য।

অধ্যাপক এল রবিন্স এর সংজ্ঞার বৈশিষ্ট্য

আপনারা যারা অর্থনীতি বিভাগে পড়াশোনা করছেন আপনাদের জন্য এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে রাখা খুবই জরুরী যে অধ্যাপক এল ভ এর সংজ্ঞা কি এবং অধ্যাপক এল রবিন্স এর সংজ্ঞার বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি। অনেক সময় পরীক্ষাতে এ প্রশ্নটি আসে অধ্যাপক এর রবিন্স এর সংজ্ঞার বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি ব্যাখ্যা কর।

অর্থনীতির কাঠামো বিশ্লেষণে অধ্যাপক এল রবিন্স এর সংজ্ঞায় মানব জীবনের তিনটি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। তা নিচে দেওয়া হল একনজর দেখে নিনঃ

অসীম অভাব
এল রবিন্স সংজ্ঞায় প্রধান বৈশিষ্ট্য হল অসীম অভাব। আমরা প্রত্যেকেই জানি যে আমাদের জীবনে অভাবের কোন শেষ নেই একটি অভাব পূরণে আরেকটি অভাব শুরু হয় এতে সীমিত সম্পদ ছাড়া অসীম অভাব পূরণ হয় না। এইজন্য অসীম অভাব পূরণের ক্ষেত্রেই মানুষ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বীরামহীন ভাবে প্রচেষ্টা করে।

অর্থনীতিতে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয় যে মানুষের এই অসীম অভাবকে কিভাবে সীমিত সম্পদের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব। যে ব্যক্তির কাছে যত বেশি অর্থ রয়েছে সে ব্যক্তি অর্থের দিক থেকে আরও বেশি বড় হতে চাই অর্থাৎ মানুষের এই অভাব কখনোই ফুরাবার নয়। আর অর্থনীতির মূল বক্তব্য হলো কিভাবে অসীম অভাবকে আমরা সীমিত সম্পর্কে পূরণ করব।

সীমিত সম্পদ
 অধ্যাপক এল রবিন্স এর সংজ্ঞায় সীমিত সম্পদের কথা উল্লেখ রয়েছে।, তাই সীমিত সম্পদের কারণে অর্থনৈতিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। যেমন অর্থের অভাব দেখা দেয় একটি অভাব পূরণ করতে পারলে আর একটি অভাব অপূরণ রয়ে যায় যার কারণে আর্থিক দিক থেকে সমস্যার পাশাপাশি পারিবারিক দিক থেকেও সমস্যা দেখা দেয়।

যদি অভাবের মত সম্পদ হতো তাহলে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সৃষ্টি হতো না। মানুষদের অভাব পূরণের ক্ষেত্রে সীমিত সম্পদ দিয়েই প্রতিদিন কঠোর পরিশ্রম করে থাকে এবং অর্থ উপার্জন করে অসীম অভাব পূরণ করার উদ্দেশ্যে। মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনে অভাব পূরণ করার জন্য এবং অর্থ উপার্জন করার জন্য যে সমস্ত কর্মকাণ্ড সম্পাদন করে থাকে সে সমস্ত কর্মকাণ্ডকে অর্থনীতিতে কর্ম বলা হয়।

সম্পদের বিকল্প ব্যবহার
সম্পদের যোগান সীমাবদ্ধ হলেও সে সম্পদকে বিকল্পভাবে ব্যবহার করা হয়। এক খণ্ড জমিতে ধান ও পাট উভয় উৎপাদন করা যায় তবে একই জমিতে একসাথে ধান ও পাট অথবা গম চাষ করা যাবে না। এজন্য সিদ্ধান্ত নিতে হবে অভাব পূরণের ক্ষেত্রে কোনটি চাষ গ্রহণযোগ্য হবে। উল্লেখ্য যে নির্দিষ্ট সময়ে একটি সম্পদ একাধিক উদ্দেশ্য ব্যবহৃত হয় না। 

সমন্বয় সাধন
সীমিত সম্পদ ও অসীম অভাবের মধ্যে কিভাবে সমন্বয় সাধন করা যায় তা অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সীমিত সম্পদ দ্বারা যেহেতু একই সময়ে প্রয়োজনীয় সব অভাব পূরণ করা সম্ভব নয় সেহেতু সম্পদের তুলনায় কোন কোন অভাব কি পরিমানে পূরণ করা সম্ভব তা নির্ধারণ করতে হয়। এই বিষয়টি রবিনস এর সঙ্গে যথাযথভাবে ফুটে উঠেছে।

এইজন্য অধ্যাপক এর রবিনস এর সংজ্ঞাটি অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে কারণ তার সংঘাতে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে কিভাবে সীমিত সম্পদ দিয়ে অসীম অভাব পূরণ করা সম্ভব। অর্থনীতির মূল আলোচ্য বিষয় হলো সীমিত সম্পদ দিয়ে অসীম অভাবকে পূরণ করা।

অভাবের আপেক্ষিক গুরুত্ব নির্ধারণ
সম্পদের তুলনায় অভাবের সংখ্যা এত বেশি যে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট আয় দ্বারা প্রয়োজনীয় সব অভাব পূরণ সম্ভব নয় এর কারণ হলো আমাদের সম্পদের পরিমাণ অনেক বেশি সীমিত বিভিন্ন দ্রব্যের তীব্রতার ভিত্তিতে দ্রব্য সামগ্রিক অত্যাবশ্যকীয়, আরাম প্রদ্য এবং বিলাস জাতে এই তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।

সীমিত আয় দ্বারা প্রথমে অত্যাবশ্যকীয় পরে আরাপ্রদ্য এবং সম্ভাব্য হলে সর্বশেষে বিলাসজাত দ্রব্যের চাহিদা পূরণ করতে হয়। এখানে অত্যাবশ্যকীয় অভাব বলতে বুঝিয়েছে যেই অভাবটি পূরণ না করলে চলবে না। এবং দ্বিতীয়তঃ আরাপ্রদ্য অভাব বলতে বুঝিয়েছে সবচেয়ে অত্যাবশ্যকীয় অভাবটি পূরণ করার পর যে অভাবটি বাকি রয়েছে।

এবং তৃতীয়ত যে অভাবটি রয়েছে তা হলো বিলাস জাত এবং বিলাস জাত সম্পর্কে আমরা প্রত্যেকেই জানি। বিলাস জাত অভাব বলতে বোঝায় যে সমস্ত অভাব গুলো আমাদের জীবনযাপনকে আরো উন্নত করতে পারে তবে এমন নয় যে সেই অভাবটি পুরোন না করলে কোন ক্ষতি হবে।  প্রতিটি অভাব পূরণ করার পর আরও অতিরিক্ত টাকা বেঁচে গেলে সেই ক্ষেত্রে বিলাসজাত অভাবটি পূরণ করা যেতে পারে।

সার্বজনীন বিজ্ঞান
রবিন তার সংজ্ঞার মাধ্যমে অর্থনীতিকে একটি সার্বজনীন বিজ্ঞানে রূপদেশ দিয়েছে। শুধু সম্পদ কিংবা কল্যাণকে কেন্দ্র করে নয় বরং স্বল্প তাকে কেন্দ্র করেই মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলী আবর্তিত হচ্ছে ফলে অর্থশাস্ত্রের পরিধির ব্যাপকতা লাভ করে।

নির্বাচন সমস্যা
মানুষের সফল অর্থনৈতিক কার্যাবলী যেকোন ভাবে নির্বাচন সমস্যার সাথে জড়িত। অধ্যাপক এল রবিনস এর সংজ্ঞা এই বৈশিষ্ট্য অর্থনীতিকে সমাজবিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা হতে আলাদা করেছে। অর্থনীতির মূল আলোচনা হল নির্বাচন সমস্যা। যেহেতু সম্পদের পরিমাণ সীমিত এবং অভাবের পরিমাণ অসীম সেক্ষেত্রে নির্বাচন সাথে তৈরি হয়।

নির্বাচন বলতে বোঝায় অসীম অভাবের মধ্য থেকে অত্যাবশ্যকীয় অভাবটিকে বেছে নেওয়া। এবং সবার প্রথমে অত্যাবশ্যকীয় অভাবকে পূরণ করা এই পদ্ধতিকে নির্বাচন পদ্ধতি বলা হয়। সম্পদের পরিমাণ সীমিত থাকার কারণে এই নির্বাচন সমস্যা তৈরি  হয়েছে।

নিরপেক্ষ বিজ্ঞান
অধ্যাপক এর রবিন্স এর মতে ভালমন্দ উচিত-অনুচিত এবং কল্যাণ অকল্যাণের প্রশ্নে অর্থনীতির ভূমিকা হল নিরপেক্ষ। নীতি শাস্ত্রের প্রশ্ন তুলে অর্থনীতিকে সীমিত  গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ রাখার পক্ষপাতী তিনি নন, এভাবে নৈতিকতা পরিত্যাগ করে এল ডাবিং অর্থনীতিকে একটি বিশুদ্ধ ও নিরপেক্ষ বিজ্ঞানের উন্নীত করেন।

বিজ্ঞানের সম্মত ও যুগোপযোগী 
অধ্যাপক এল রবিন্স সম্পদের সীমাবদ্ধতার সাথে সম্পৃক্ত সমস্যাগুলো বাস্তব দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরেন। ফলে তার সংজ্ঞাটি অধিক বস্তুনিষ্ঠ যুক্তিযুক্ত বিজ্ঞানসম্মত যুগোপযোগী হিসেবে প্রমাণিত হয়। অধ্যাপক এর রবিনস এর সংজ্ঞা এই নয়টি বৈশিষ্ট্য অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হিসেবে প্রত্যেকে মনে করেছে যার কারণে এর রবিন্স এর সংজ্ঞা বিজ্ঞানসম্মত যুগোপযোগী এবং যুক্তিযুক্ত।

আর এর রবিন্স এর সংজ্ঞার মাধ্যমে অর্থনীতির পূর্ণাঙ্গ ধারণা প্রকাশ পেয়েছে। প্রিয় পাঠক আশা করছি আপনি বুঝতে পেরেছেন অধ্যাপক এর রমেন্স এর সংজ্ঞা এবং অধ্যাপক এর রবিন্স এর সংজ্ঞার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে। এবার চলুন আমরা দেখে আসি অধ্যাপক এল রবিন্স এর সংজ্ঞার শ্রেষ্ঠত্ব

অধ্যাপক এল রবিন্স এর সংজ্ঞার শ্রেষ্ঠত্ব

অধ্যাপক এর রবিনস এর সংজ্ঞার শ্রেষ্ঠত্ব বলতে কী বোঝায় ? অধ্যাপক উইক স্টিড, স্টিকগলার স্টিটভঙ্গি, এরিখ রোল, স্টেনিয়ার ও হেগ প্রমুখ অর্থনীতিবিদ সংজ্ঞার ক্ষেত্রে রবিন্সকে অনুসরণ করেছেন।

এই সমস্ত কারণে পূর্বসূরীদের ংজ্ঞার চেয়ে এর রবিন্স এর সংজ্ঞ া শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করতে পারে,। উত্তরসূরীরাও এর বাস্তবতা স্বীকার করেছেন এবং জোর দাবি অর্থনীতিকে যে সংকীর্ণ গভীর মধ্যে আবদ্ধ করে রেখেছিল রবিনস তার সংজ্ঞার মধ্যে এর মুক্তি ঘটান।

  • উপরিউক্ত পর্যটনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় সংজ্ঞাটি অধিগ্রহণযোগ্য ও উন্নত এর কারণ হলো,
  • এই সংজ্ঞা সম্পদ ভিত্তিক কল্যাণ ধারণা না করে বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা প্রদানে সক্ষম হয়েছে।
  •  এই সংজ্ঞাটি অর্থনীতিকে একটি বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের পরিণত করেছে
  • এই সংজ্ঞায় মূল্য নির্ধারণ সম্পর্কে বা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে।
  • সংজ্ঞাটিতে নৈতিকতা বর্জন করা হয়েছে এবং
  • সংজ্ঞাটিতে মানব জীবনে অসীম অভাব ও সীমাবদ্ধ যোগান সম্পর্কে দিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

উপরিউক্ত কারণ গুলোর জন্য অধ্যাপক এর রবিনস এর সঙ্গে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য বলে প্রত্যেকে মনে করেছেন এবং এর সংজ্ঞাটির কারণে অর্থনীতি একটি বিশুদ্ধ বিজ্ঞান হিসেবে পরিচিত হয়েছে। এবং এই সংজ্ঞাটির কারণে অর্থনীতির কল্যাণ সম্পর্কে প্রত্যেকে জানতে পেরেছে। তবে এই সংজ্ঞাটিতে কিছু ভুলভ্রান্তিও রয়েছে। নিচে এল রবিন্স  এর অর্থনীতির সংজ্ঞার সমালোচনা দেওয়া রয়েছে দেখে নিন।

এল রবিন্স এর অর্থনীতির সংজ্ঞার সমালোচনা

অধ্যাপক এল রবিন্স এর অর্থনীতির সংজ্ঞার সমালোচনা সম্পর্কে জানতে চান? প্রতিটি অর্থনীতিবিদ অর্থনীতি সম্পর্কে যে সংজ্ঞা গুলো প্রদান করেছেন তার মধ্যে কিছু না কিছু অসম্পূর্ণতা কিংবা ভুলভ্রান্তি রয়েছে। সেই ক্ষেত্রে এবার আমরা দেখব অধ্যাপক এর রবিন্সের 1931 সালে দেওয়া সেই সংজ্ঞাটির কিছু সমালোচনা।

অধ্যাপক এল  রবিন্স এর সংজ্ঞাটি বিজ্ঞান সম্মত হওয়ার সত্ত্বেও বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ সমালোচনা করেছেন নিম্নে সেগুলো তুলে ধরা হলো।

অর্থনীতির বিষয়বস্তুর ব্যাপকতা
এর অর্থনীতির বিষয়বস্তুকে অত্যন্ত ব্যাপক করেছেন তার মতে যেসব দ্রব্যের অভাব রয়েছে কিন্তু অভাব পূরণে প্রচুর সম্পদ রয়েছে এই সম্পদ অর্থশাস্ত্রের বিষয়বস্তু যেমন মাতৃ স্নেহ পিতৃস্নেহ ইত্যাদি অর্থনীতির বিষয়বস্তু। কিন্তু এদের বিনিময়ে মূল্য না  থাকাই এরা অর্থনীতির অন্তর্ভুক্ত হতে পারেনা।  অর্থাৎ যে কর্মগুলো সম্পাদন করার মাধ্যমে আমরা ইনকাম করতে পারি আয় করতে পারি সেই কর্মকান্ড গুলোকে অর্থনীতিতে কাজ বলা হয়।

আর যে সমস্ত কার্য সম্পাদন করার ফলে আমরা গণপ্রকার আয় করতে পারি না সে সমস্ত কার্যক্রমকে অর্থনীতির ভাষায় কাজ বলা হয় না। যেমন আপনি আপনার বাচ্চাকে আদর স্নেহ করছেন এটি কোন কাজ নয় তবে আপনি অন্যের বাচ্চার দায়িত্বে রয়েছেন এবং অন্যের বাচ্চার দেখভাল যত্ন করার জন্য আদর স্নেহ করার জন্য তারা আপনাকে প্রতিমাসে কিছু অর্থ প্রদান করে থাকে এটি অর্থনীতির ভাষায় কাজ।

নির্বাচন সমস্যা
মানুষ তার ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে অনেক কিছু পছন্দ বা বাছাই করে থাকে। যার সবগুলোই অর্থনীতির আওতাভুক্ত নয় ।  যেমন একজন লোক সিনেমা হলে যাবে না খেলার মাঠে যাবে? এ ধরনের বাছাই অর্থনীতির আওতাভুক্ত হতে পারেনা। এটি তার অত্যাবশ্যকীয় অভাব নয়। অর্থাৎ যে সমস্ত কাজগুলো আমাদের অত্যাবশ্যকীয় 

এবং যে অভাবগুলো আমাদের অনেক বেশি জরুরী সে অভাবগুলো পূরণ করার ক্ষেত্রে নির্বাচন প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হয় তবে খেলার মাঠে যাব নাকি সিনেমা হলে যাব এই বিষয়ে কোন প্রকার নির্বাচন প্রক্রিয়া কার্যকারী নয়।

কল্যাণ অনুপস্থিতি
অধ্যাপক ব্লোডিং এর মতে মানব কল্যান এর মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি বাদ দিয়ে স্বল্পতাকে  খুব বেশি প্রাধান্য দেওয়া ঠিক হয়নি। এতে অধ্যাপক এল রবিনস এর সংজ্ঞাটি সংকীর্ণ সংজ্ঞায়  পূর্ণতা পেয়েছে। অর্থাৎ অধ্যাপক ব্লোডিং এর মতে মানব কল্যানের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে অর্থনীতির সংজ্ঞা থেকে বাদ দেওয়া ঠিক হয়নি।

অধ্যাপক ব্লোডিং বলেছেন যে অধ্যাপক এল রবিন তিনি তার সংজ্ঞায় কল্যাণ শব্দটিকে বাদ দিয়ে স্বল্পতা শব্দটি অতিমাত্রায় ব্যবহার করেছেন। তবে অর্থনীতি মূল উদ্দেশ্য হলো মানবের কল্যাণ সাধন এবং অর্থনীতি এর মানে হলো মনের বিজ্ঞান সে ক্ষেত্রে অর্থনীতির সঙ্গে মানবকল্যাণ এই শব্দটি থাকা জরুরি।

বেকারত্ব ব্যাখ্যা নেই
বর্তমান বিশ্বে অর্থনীতি প্রেক্ষাপটে প্রত্যেকটি দেশের জন্যই বেকারত্ব একটি মারাত্মক সমস্যা।। এই সমস্যায় লক্ষ লক্ষ জনগোষ্ঠীর মানবেতর জীবন যাপন করছে কিন্তু এর রবিন্স এর সংগায় বেকার সমস্যা সংক্রান্ত কোনো প্রকার আলোচনা করা হয়নি। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় একটি সমস্যা হলো বেকারত্ব বাংলাদেশের বেকারত্বের হার অনেক বেশি যার কারণে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অনুন্নত।

সামাজিক চরিত্রের অনুপস্থিতি
অধ্যাপক এল রবিন্স এর সংজ্ঞায় অর্থনীতির সামাজিক চরিত্র অপেক্ষা করা হয়েছে। স্বল্পতার সমস্যা ব্যক্তি নয় সমষ্টির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যেমন জনস্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, গণশিক্ষা ইত্যাদি রবিন্স এর সংজ্ঞাই নেই। রবিনস এর সংঘাতে কোথাও জনসাস্থ্য কিংবা সংস্কৃতি বিষয়ে কিংবা গণশিক্ষা বিষয়ে কোনো প্রকার তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।

উন্নয়ন তত্ত্ব নেই
তার সঙ্গে অর্থনীতির বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করে। কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়নের ব্যাপারে কোন দিকনির্দেশনা তিনি দেননি ফলে উন্নয়নের ধারা ব্যাহত হচ্ছে। অর্থাৎ অর্থনৈতিকভাবে একটি দেশকে কিভাবে আরো উন্নত করা যায় সে বিষয় সম্পর্কে অধ্যাপক এল রবিন্স কোন প্রকার তথ্য প্রদান করেননি।

মূল্য নির্ধারণ তত্ত্বে সীমাবদ্ধ
অধ্যাপক এল রবিন্স অর্থনীতিকে শুধুমাত্র মূল্য ও নিরূপণ তত্ত্বের রূপান্তরিত করেছেন। কিন্তু মূল্য তত্ত্ব ছাড়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন জাতীয় আয়, বিনিয়োগ নিয়োগ ব্যবস্থা ইত্যাদি এর সংজ্ঞা অনুপস্থিত। একজন ব্যক্তির জীবনে শুধুমাত্র মূল্য নিরূপণ অর্থনীতিতে শুধুমাত্র মূল্য ও নিরূপণ নিয়ে আলোচনা করা হয় না বরং অর্থনীতিতে জাতীয় আয় থেকে শুরু করে বিনিয়োগ নিয়োগ ব্যবস্থা নিয়েও আলোচনা করা হয় এই বিষয়গুলো এল রবিন্স এর সংজ্ঞায় অনুপস্থিত রয়েছে ।

ধনাত্মক বিজ্ঞান
রবিন্স অর্থনীতিকে ধনাত্মক বিজ্ঞান বলে অবহিত করেছেন। কিন্তু PEARSONS WOTTON প্রমুখ অর্থনীতিবিদ অর্থনীতিকে আদর্শ মূলক বিজ্ঞান হিসেবে অভিহিত করেছেন।

সঠিক দিকনির্দেশনা হীন
বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য কোন সঠিক ও কার্যকরী পথ নির্দেশনা এই সংগাই পাওয়া যায় না এই জন্য এই সংজ্ঞাটিকে সংকীর্ণ সংজ্ঞা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। অধ্যাপক এর সঙ্গায় জাতীয় আয় বেকারত্ব এই সমস্যাগুলি সম্পর্কে কোন প্রকার তথ্য দেওয়া নেই।

জটিলতা
রবিন্স এর সংজ্ঞাটি একটু জটিল প্রকৃতির। সংজ্ঞার বিস্তৃতি দ্বারা রবিন্স অর্থনীতিকে এমন দুরূহ ও জটিল করেছেন যে সাধারণ মানুষের পক্ষে এটা বোঝা কঠিন হয়ে পড়েছে। অর্থাৎ এল রবিনস এ সংজ্ঞাটিকে একটি জটিল ভাবে পর্যটনা করেছেন যার কারণে সাধারণ মানুষের পক্ষে তার সংজ্ঞাটি বুঝে ওঠা একটু কষ্টকর হয়ে উঠেছে।

উপরিউক্ত আলোচনা পরিপ্রেক্ষিতে বিচার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে অধ্যাপক এল রবিন্স এর সংজ্ঞাটি অধিক যুক্তিযুক্ত বিজ্ঞানসম্মত এবং উন্নত এই জন্য অর্থনীতিবিদদের নিকট এই সংজ্ঞাটি অধিক জনপ্রিয়। প্রিয় পাঠক গন আশা করছি ওপরের আলোচনার মাধ্যমে আপনি বুঝতে পেরেছেন এল রবিন্স এর অর্থনীতির সংজ্ঞার সমালোচনা সম্পর্কে।

কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর 

অধ্যাপক এল রবিন্স এর অর্থনীতির সংজ্ঞা কি ছিল?
অধ্যাপক এর রবিনস এর অর্থনীতির সংজ্ঞা কি ছিল? অধ্যাপক এর রবিন্স এর অর্থনীতি সংজ্ঞা ছিল ''মানুষের সীমিত সম্পদের সাথে অসীম অভাবের সমন্বয়ে সাধন করা'' অথবা ''সীমিত সম্পদের মাধ্যমে অসীম অভাবকে পূরণ করা''।

কেন অধ্যাপক এল রবিন্স অর্থনীতির সংজ্ঞায় অধ্যাপক ব্লোডিং সমালোচনা করেছেন? 
অধ্যাপক এল রবিনস এর অর্থনীতির সংজ্ঞার মাধ্যমে অর্থনীতির মূল বক্তব্য প্রকাশ পেয়েছিল অধ্যাপক এল রোবিন্স তার সংঘাতে সীমিত সম্পদ সহ অসীম অভাবের কথাটি উল্লেখ করেছেন পাশাপাশি কিভাবে এই সমস্ত সমাধান করা যায় সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে বেশ কিছু ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। কিন্তু তিনি তার সংজ্ঞাতে কোথাও বেকারত্ব কথাটি উল্লেখ করেননি। আমরা প্রত্যেকে জানি বিশ্বে বেকারত্বের হার কতটা বেশি। অধ্যাপক এল রবিন্স তার সংজ্ঞাতে বেকারত্ব এ কথাটি উল্লেখ করেননি এই জন্য অধ্যাপক ব্লোডিং তার সংজ্ঞার সমালোচনা করেছেন।

অধ্যাপক এল রবিনস কত সালে অর্থনীতির সংজ্ঞা প্রদান করেছিলেন?
অধ্যাপক এল রবিন ১৯৩১ সালে অর্থনীতির সংজ্ঞা প্রদান করেছিলেন। আপনি যদি সেই সংখ্যা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে উপরে দেখুন আমরা অধ্যাপক এল রবিন্স এর সংজ্ঞা সহ অধ্যাপক এল রবিন্স এর সংজ্ঞার সমালোচনা ব্যাখ্যা করেছি।

উপসংহারঃ অধ্যাপক এল রবিন্স এর সংজ্ঞা এবং সংজ্ঞার সমালোচনা

প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দরা আজকের এই পোস্টে আমরা দেখলাম অধ্যাপক এল রবিন্স এর সংজ্ঞা এবং অধ্যাপক এর রবিন্স এর অর্থনীতির সংবাদ সমালোচনা। অধ্যাপক এল ডাবিংস এর সংজ্ঞা অনেক বেশি যুক্তিপূযুক্ত এবং বিজ্ঞানসম্মত। তবে এর সংজ্ঞা একটু জটিলতাও রয়েছে যার কারণে অনেক অর্থনীতিবিদ এর সমালোচনা করেছেন। তবে রবিনস এর সংজ্ঞার মাধ্যমে অর্থনীতির মূল বক্তব্য ফুটে উঠেছে।

রবিন্স এর মূল বক্তব্য ছিল সীমিত সম্পদের মাধ্যমে অসীম অভাবকে পূরণ করার ক্ষমতাকে অর্থনীতি বলা হয় আর এটি অর্থনীতির মূল বক্তব্য। এছাড়া রবিনস এর সংগাতে অর্থনীতির সীমিত সম্পদের কথাটি উল্লেখ করেছেন এবং আমাদের অভাবের পরিমাণ অসীম সেই বিষয়ে বিশ্লেষণ করেছেন এবং কিভাবে এই সীমিত সম্পদের মাধ্যমে অসীম অভাবকে পূরণ করা সম্ভব সে বিষয়গুলো সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেছেন।

তবে অধ্যাপক এর রবিন্স এর সংঘাতে বেকারত্ব নামক কোন শব্দ খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিশ্বে বেকারত্বের পরিমাণ অনেক বেশি এই বিষয়ে অধ্যাপক এর রবিন্স কোন প্রকার পর্যালোচনা করেন নি এই জন্য বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এল রবিন্স এর সংজ্ঞা নিয়ে সমালোচনা করেছেন। আজকের এই পোস্টে আমরা অধ্যাপক এল রবিন্স এর সংজ্ঞা সহ অধ্যাপক এল রবিন্স এর সংজ্ঞার সমালোচনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ড্রিমার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url